আঊটসোর্সিং-ফ্রিল্যান্সিং অনলাইন জব ও সফল ফ্রিল্যান্সিং হওয়ার উপায় ।

ফ্রিল্যান্সিং শব্দটা নিয়ে আমাদের দেশে বেশ সোরগোল হচ্ছে কয়েক বছর ধরেই। কাজটা শুরু করেছিল বিডিওএসএন, তারপরে বেসিস থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের অ্যাওয়ার্ড দেওয়ায় সেটা অন্য মাত্রা পায়। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই।

ফ্রিল্যান্সিং পেশাটা কিন্তু নতুন না, ফ্রিল্যান্স কলাম লেখক আছেন, সাংবাদিক আছেন, ফটোগ্রাফার আছেন। তাঁরা যেটা করেন, কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চাকরি করেন না, তাদের নিজের দক্ষতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন, যখন যেখানে কাজ পান। এখন, ইন্টারনেটের কল্যাণে বিষয়টা বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে গেছে। লন্ডনের কেউ হয়ত নতুন ব্যবসা খুলবে, তার লোগো ডিজাইন করা দরকার, সেটা সে যদি লন্ডনে কাউকে দিয়ে করাতো, তাহলে তার খরচ হতো হয়ত ২০০০ ডলার, কিন্তু বাংলাদেশের একটি মেয়ে, যে কী না ফ্রিল্যান্স ডিজাইনার, সেটি করে দেবে ১০০ ডলারে। কিংবা আমেরিকায় কোনো কোম্পানী মোবাইল অ্যাপ তৈরি করবে, সেটি যদি তারা কোনো আমেরিকান সফটওয়্যার কোম্পানীকে দিয়ে করাতো, হয়ত ৫০,০০০ হাজার ডলার খরচ হতো, বাংলাদেশি সফটওয়্যার নির্মাতা কোম্পানী সেটি করে দিবে ৫০০০ ডলারে। আবার এমনও হয় যে কানাডার কোনো সফটওয়্যার কোম্পানীতে কাজের চাপ বাড়ছে, তারা সেখানে বাড়তি লোক না নিয়ে অতিরিক্ত কাজ স্বল্প আয়ের কোনো দেশের কোম্পানীকে দিয়ে করালো। শেষের এই ব্যাপারটাকে বলে আউটসোর্সিং। মানে নিজে না করে, বা নিজের কোম্পানীতে অতিরিক্ত লোকবল না নিয়ে, কোনো কাজ অন্য কোম্পানীকে দিয়ে করানো।
ইন্টারনেটের কারণে এই ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ের বিষয়টা ভৌগলিক সীমারেখার বাইরে চলে গেছে। বেশ কিছু অনলাইন মার্কেটপ্লেস আছে, যেখানে বিড করে কাজ পাওয়া যায়, আর কাজ ঠিকঠাক শেষ হলে অর্থ প্রাপ্তিরও নিশ্চয়তা থাকে। সেজন্য সেই মার্কেটপ্লেস একটা কমিশন রাখে (সাধারনত ১০% বা তার আসেপাশে)। বাংলাদেশেও অনেক তরুণ-তরুণী এখন ফ্রিল্যান্সিংয়ে যুক্ত হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে ইন্টারনেটে অনেক কনটেন্ট আছে, বাংলাতেও আছে, এমনকী বইও আছে।
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে আরো জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন।

এবার কয়েকটি অসুবিধার কথা বলি।
১) নিজের মেধার পূর্ণ ব্যবহার না করা।
অনেকের মধ্যেই অনেক ভালো কাজ করার মতো মেধা ও যোগ্যতা আছে। দরকার কেবল একটু পরিশ্রম। এখন কেউ ২ মাস ঘাঁটাঘাঁটি করে ফ্রিল্যান্সিংয়ে নেমে পড়ল, তার বয়স হয়ত ১৫। ঘণ্টায় ২ ডলার আয় করেই অনেক খুশি। মাসে ১০০ ঘণ্টা কাজ করলে ২০০ ডলার, মানে ১৫ হাজার টাকা! সে তার বেশিরভাগ সময়ই ব্যায় করতে লাগলো এসব কাজে। নতুন কিছু শেখা হলো না, নিজে উন্নত হলো না, তাহলে উন্নতিও হবে না। ১৫ বছর বয়সে ১৫ হাজার টাকা অনেক বেশি মনে হবে, কিন্তু আরো ১৫ বছর পরে, ৩০ বছর বয়সে ৩০ হাজার টাকা কিন্তু খুব বেশি নয়। তাহলে কী মানুষ ফ্রিল্যান্সিং করবে না? করবে, কিন্তু সেটা প্রয়োজন হলে। খুব দরকার না হলে ওই বয়সে ফ্রিল্যান্সিং না করে বরং বিভিন্ন জিনিস শিখে নিজের ভিতটা শক্ত করা প্রয়োজন, যাতে ২ ডলার রেটের কাজগুলো করতে না হয়, ঘণ্টায় ১০ ডলার রেটে যেন শুরু করতে পারে। তীর অনেক সামনে যেতে চাইলে শুরুতে তাকে বেশ পেছনে টানা লাগে।
২) আরেকটা অসুবিধা হচ্ছে কাজের পরিবেশ ও একাকীত্ব। ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত বাসায় বসে কাজ করে। এতে বেশ কিছু সমস্যা হয়। যেমন বাসায় হয়ত বুঝতে চাইবে না যে সে কাজ করছে। হুটহাট বিভিন্ন কাজের ফরমায়েশ দেওয়া হবে। কিংবা সে যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তার স্ত্রী মনে করবে যে সে তার দিকে যথেষ্ট মনোযোগ না দিয়ে কম্পিউটার নিয়ে বসে আছে। আর বাচ্চা-কাচ্চা হলে তো কথাই নেই। ল্যাপটপে হিসু করে দেওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। তাহলে কী মানুষ ফ্রিল্যান্সিং করবে না? করবে, তবে কাজের জন্য বাসার আলাদা একটা রুম ঠিক করে নিলে ভালো হয় যেখানে অন্যরা সহজে আসবে না। আরো ভালো হয় বাইরে শেয়ারড অফিস নিলে। বিদেশে এরকম অনেক কোওয়ার্কিং স্পেস ( co-working space ) আছে। যেখানে রুম কিংবা টেবিল ভাড়া নিয়ে কাজ করা যায়। সেখানে কাজের পরিবেশ ভালো থাকে। আবার অন্যদের সাথে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ মেলে। নিয়মিত বাইরে গেলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে এমন কোওয়ার্কিং স্পেস চালু হচ্ছে। সামনে হয়তো আরো বাড়বে। আর এমন ব্যবস্থা না থাকলে কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার মিলে একটি অফিস ভাড়া নিয়ে ফেলা যায়!
৩) সামাজিক স্বীকৃতি। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা এখনও বিয়ে করে নি, তারা হয়তো টের পাচ্ছে না বিষয়টা। তবে এক্ষেত্রে বিডিওএসএন ও বেসিসকে ধন্যবাদ দিতে হয়, কারণ তারা এটা নিয়ে হৈচৈ করার কারণে ধীরে ধীরে মানুষ বিষয়টা সম্পর্কে জানতে পারছে।৪) শেষ অসুবিধাটা হচ্ছে রাত জাগা। যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমেরিকার লোকজনের সাথে কাজ করতে হয়, আর সেটা পৃথিবীর মানচিত্রে আমাদের ঠিক উল্টো দিকে, তাই রাত না জেগে উপায় নেই। এটা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে এ থেকে পরিত্রাণের সহজ উপায় আমার জানা নেই।
আঊটসোর্সিং-ফ্রিল্যান্সিং অনলাইন জব ও সফল ফ্রিল্যান্সিং হওয়ার উপায় । আঊটসোর্সিং-ফ্রিল্যান্সিং অনলাইন জব ও সফল ফ্রিল্যান্সিং হওয়ার উপায় । Reviewed by Mamun IT Solution on April 11, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.